IQNA

ইবাদতের মৌসুমে স্বাগতম ; রজব মাসের শুভ আগমনের শুভেচ্ছা 

15:41 - January 12, 2024
সংবাদ: 3474930
ইকনা: রজব হারাম ( নিষিদ্ধ ) চার মাসের অন্তর্ভুক্ত ( উক্ত চার মাসে আক্রমণাত্মক যুদ্ধ করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে বলেই এ চার মাসকে হারাম বা নিষিদ্ধ মাস বলা হয় । এ চার মাস : যিল ক্বদ্ , যিল হজ্জ , মুহররম ও রজব)। এই রজব এবং অপর তিন নিষিদ্ধ মাস যিল ক্বদ্ , যিল হজ্জ ও মুহররমে আক্রান্ত হলে  কেবল আত্মরক্ষা মূলক যুদ্ধ ব্যতীত আক্রমণাত্মক যুদ্ধ শুরু ও তা অব্যাহত রাখা নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং এ মাস সমূহে অপরাধেরও ( অর্থাৎ কেউ যদি কোন ব্যক্তির অন্যায় ভাবে শারীরিক ক্ষতি সাধন বা জিনায়ত করে তাহলে তাকে ) দিয়া ( ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রদত্ত অর্থ ) বেশ মোটা অঙ্কের ( প্রদান ও পরিশোধ করতে হবে )।

ইবাদতের মৌসুম ( রজব , শা'বান ও রমযান - এ তিন মাস ইবাদতের ঋতু ) স্বাগতম ; রজব মাসের শুভ আগমনের শুভেচ্ছা :

بسم الله الرحمن الرحیم

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম 


রজব মাসের ফযীলত
ভূমিকা 
মহান আল্লাহর সাথে সম্পর্ক স্থাপন এবং হেদায়েতের পথে ফিরে আসার জন্য বছরের সকল মাস ও সকল দিবসই হচ্ছে এক উপযুক্ত ফুরসৎ ( সময় ও সুযোগ ) । তবে এ সম্পর্ক  , ইবাদত ও আধ্যাত্মিক আমল সমূহের ক্ষেত্রে  কিছু কিছু দিনের বিশেষ সম্ভাবনা ও উপযুক্ততা রয়েছে যা বিবেচনা ও সদ্ব্যবহার করে মু'মিন ঐ সব দিনের কল্যাণ ও বরকত (সওয়াব ) সমূহ থেকে লাভবান ও উপকৃত হতে পারে।
এ সব ( অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ) দিন বা সময়ের একটি হচ্ছে রজব মাস যা মহান আল্লাহর নির্বাচিত ( অত্যন্ত সম্মানিত ) চার মাসের অন্তর্ভুক্ত।
রজব হারাম ( নিষিদ্ধ ) চার মাসের অন্তর্ভুক্ত ( উক্ত চার মাসে আক্রমণাত্মক যুদ্ধ করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে বলেই এ চার মাসকে হারাম বা নিষিদ্ধ মাস বলা হয় । এ চার মাস : যিল ক্বদ্ , যিল হজ্জ , মুহররম ও রজব)। এই রজব এবং অপর তিন নিষিদ্ধ মাস যিল ক্বদ্ , যিল হজ্জ ও মুহররমে আক্রান্ত হলে  কেবল আত্মরক্ষা মূলক যুদ্ধ ব্যতীত আক্রমণাত্মক যুদ্ধ শুরু ও তা অব্যাহত রাখা নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং এ মাস সমূহে অপরাধেরও ( অর্থাৎ কেউ যদি কোন ব্যক্তির অন্যায় ভাবে শারীরিক ক্ষতি সাধন বা জিনায়ত করে তাহলে তাকে ) দিয়া ( ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রদত্ত অর্থ ) বেশ মোটা অঙ্কের ( প্রদান ও পরিশোধ করতে হবে )।
রজব মাসের নাম আসাব্ব মাস রাখার কারণ সম্ভবত এ অর্থে যে এ মাসে মহান আল্লাহর রহমত ( দয়া ও কল্যাণ ) নাযিল ( অবতীর্ণ ) হয় যা এ মাসের গুরুত্বকে আরো স্পষ্ট করে দেয়। মহানবী (সা) বলেছেন : রজব মাসকে আসাব্ব্ নামকরণের কারণ হচ্ছে এই যে এ মাসে আমার উম্মতের ওপর মহান আল্লাহর রহমত নাজিল ও অবতীর্ণ হয় ।
 এ মাসে মহান আল্লাহর প্রতি তাওয়াজ্জুহ্ ( মনোনিবেশ ) , তওবা ( অনুশোচনা ) , ইনাবাহ্ ( মহান আল্লাহর দিকে বিবেক , হৃদয় ও কণ্ঠ সহকারে গভীর ভাবে প্রত্যাবর্তন ) ও ইবাদত - বন্দেগীর অনেক নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং অগণিত রেওয়ায়তও বর্ণিত হয়েছে এবং বিদ্যমান রয়েছে । 
রওযাখ্বানী ( মহানবীর - সা - আহলুল বাইতের - আ- স্মরণে শোক ও মর্সিয়া পাঠ ) , দু'আ ও অনুনয় বিনয় করা ছাড়াও এ রজব মাসেরও প্রচুর আমল ও ইবাদত - বন্দেগী রয়েছে যেগুলো মূলত : দুই অংশ বিভক্ত । যথা: ১ . রজব মাসের সর্বজনীন ও অভিন্ন আমল এবং এ মাসের বিভিন্ন দিবস ও রাতের বিশেষ বিশেষ আমল শেখ আব্বাস কোম্মী প্রণীত মাফাতীহুল জিনান এবং দুআর আরো অন্যান্য গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে যেগুলোর মধ্য থেকে আমরা কয়েকটি নিচে উল্লেখ করছি :
এ মাসের মুশতারাক ( সর্বজনীন ও অভিন্ন) আমল সমূহ :
এ সব আমল যেগুলো কোনো নির্দিষ্ট দিবসের সাথে একান্ত সংশ্লিষ্ট নয় বরং গোটা রজব মাস জুড়েই আঞ্জাম দেওয়া যায় সেগুলো আসলে অনেক। আমরা ও গুলোর মধ্য থেকে নিচে গুটি কতক উল্লেখ করছি ।
১. রোযা 
মহানবী (সা) থেকে বর্ণিত :
যে ব্যক্তি এ মাসের যে কোনো একদিন রোযা রাখবে মহান আল্লাহর মহা সন্তুষ্টি সে অর্জন করবে , ঐশ্বরিক ক্রোধ তার থেকে দূর হয়ে যাবে , তার ওপর বেহেশতের দরজা খুলে যাবে  এবং জাহান্নামের দুয়ার বন্ধ হয়ে যাবে ।
ঠিক একই ভাবে অপর একটি হাদীসে এসেছে :
রজব হচ্ছে বেহেশতের একটি ঝর্ণা , যা দুধের চেয়ে সাদা এবং মধুর চেয়ে মিষ্টি ।  যে ব্যক্তি এ মাসের যে কোনো এক দিন‌ রোযা রাখবে সে উক্ত ঝর্ণা থেকে পান করবে !
২. ইয়া মান ইয়ামলিকু হাওয়ায়েজাস সায়িলীন - এ দুআ পাঠ 
৩. আসতাঘফিরুল্লাহাল্লাযী লা ইলাহা ইল্লা হুওয়া , ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু ওয়া আতূবু ইলাইহি । - এ যিকর এক শো বার পাঠ 
৪. লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ - এ যিকর ১০০০ বার পড়া ।
৫.বেশি বেশি ক্বুল হুওয়াল্লাহু আহাদ ( সূরা - ই ইখলাস ) এবং যে সব দুআ ও যিকর মাফাতীহুল জিনানে বিস্তারিত বর্ণিত হয়েছে সেগুলো পাঠ ।
যে সব আমলও বিশেষ ভাবে মুবারক এ রজব মাসের বিশেষ কোনো দিন অথবা রাতে আঞ্জাম দেয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সে গুলো থেকে কয়েকটি নীচে আমরা উল্লেখ করছি :
১.রজব মাসের প্রথম রাত
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ রাতে কিছু আমল করার নির্দেশ রয়েছে :
ক. রজব মাস শুরুর দুআ 
খ. গোসল করা 
গ. এ রাতে ইমাম হুসাইনের ( আ ) যিয়ারতের অনেক ফযীলত রয়েছে।
ঘ.মাগরিবের নামাযের পর ২০ রাকাত নামায , ফজরের নামাযের মতো এক সালামে প্রতি দু রাকাত করে আদায় করতে হবে ।
ঙ. এ মাসের প্রথম রাত জাগরণ ( ইহইয়া )
২. ১৩ রজবের দিবসের রোযা 
রজব মাসের ১৩ ( ত্রয়োদেশ ) দিবস ইমাম আমীরুল মু'মিনীন হযরত আলীর ( আ ) শুভ জন্মদিন এবং আইয়ামে বীযের ( তিন উজ্জ্বল দিবস : ১৩ ,১৪ ও ১৫ রজব ) প্রথম দিন । এ দিন এবং এর পরবর্তী দুই দিন ( ১৪ ও ১৫ রজব ) রোযা রাখার অজস্র সওয়াব রয়েছে।
৩. ১৪ রজবের দিবস 
এ দিন রোযা রাখার অনেক সওয়াব ।
৪.১৫ রজবের রাত 
এ রাত অত্যন্ত ফযীলত ও গুরুত্বপূর্ণ। এ রাতের কিছু আমল রেওয়ায়ত হয়েছে। যেমন : গোসল , রাত জাগরণ ( ইহয়াহ ) , ইমাম হুসাইনের (আ) যিয়ারত এবং আরো কিছু নামায ঐ সব রেওয়ায়তে বর্ণিত হয়েছে।
৫.১৫ রজবের দিবসের রোযা ; 
মুবারক ( কল্যাণময় ) এ দিবসের আরো কিছু আমল যেমন : গোসল , হযরত সাইয়েদুশ শুহাদার ( আ ) যিয়ারত , সালমান ফার্সীর নামায আদায় করা এবং উম্মে দাউদের আমল হাদীস ও রেওয়ায়তে বর্ণিত হয়েছে।
৬. ২৭ রজবের রাত
মাব'আসের রাত ( মহানবীর - সা - নুবুওয়াত ঘোষণার রাত ) যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রজনী সমূহের অন্তর্গত এবং এ রাতে বেশ কিছু আমল আছে যেমন : গোসল , যেভাবে মাফাতীহুল জিনানে বর্ণিত হয়েছে সেভাবে তা আঞ্জাম দেয়া :
৭. রজব মাসের ২৭ তম দিবস 
রজব মাসের ২৭ তম দিবস মাব'আস ( অর্থাৎ মহানবীর নুবুওয়ত ঘোষণা )দিবস যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন এবং তা এমন সব উৎসবের অন্তর্ভুক্ত যেগুলোর সম্মান ও ভাবগাম্ভীর্যের ওপর আহলুল বাইত ( আ ) সবিশেষ জোর গুরুত্ব আরোপ করেছেন । উক্ত দিবসের বেশ কিছু আমল যেমন : রোযা যা বছরের ৪ অতি গুরুত্বপূর্ণ দিনের একটি , দরূদ শরীফ পাঠ, যিকর করা এবং রাসূলূল্লাহ ( সা ) ও আমীরুল মু'মিনীন আলীর( আ )  যিয়ারত করার নির্দেশ ( সিফারিশ )ও দেওয়া হয়েছে।
৮ . রজব মাসের শেষ দিন 
এ দিন , তুমি হযরত সালমানের ( রা : ) নামায আদায় করবে । এ দিন রোযা রাখারও বহু সওয়াব আছে । ইমাম রিযা ( আ ) বলেছেন : যে ব্যক্তি রজবের শেষ দিবসে রোযা রাখবে মহান আল্লাহ তার গুনাহ খাতা মাফ করে দেবেন ।
(( মহান আল্লাহ আমাদেরকে সম্মানিত এ  মাসের ইবাদত - বন্দেগী ও আমল আঞ্জাম দেয়ার তৌফিক দিন । ))
অনুবাদ : ইসলামী চিন্তাবিদ এবং গবেষক হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলেমিন মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান,

captcha